সর্বশেষ :
ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন আবুধাবিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর কপাল খুললো: লটারি জিতলেন ৭৫ কোটি টাকা কোচ কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় বাফুফের কমিটি থেকে বাদ শাহীন ‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের

মাদকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক ইমামের নিঃশব্দ হত্যাকাণ্ড: ফ্যাসিবাদের ছায়ায় সমাজ

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫
  • ৫৩ বার

প্রকাশ: ০৭ই জুন’ ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন

লক্ষ্মীপুর জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। সেখানকার একটি মসজিদের নিরহংকারী ইমাম ছিলেন মাওলানা কাউসার। সাধারণ ইমামদের মতো তিনি শুধু নামাজ পড়াতেন না—তিনি সমাজ ও দেশের কল্যাণে নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করতেন। বিশেষ করে মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে তাঁর ভেতরে ছিল তীব্র প্রতিক্রিয়া। মসজিদে খুতবা দেওয়ার বাইরে গিয়ে তিনি সরাসরি কথা বলতেন মাদকের বিরুদ্ধে, রুখে দাঁড়াতেন সমাজের নেশা-গ্রস্ত চক্রগুলোর বিরুদ্ধে।

এই অসীম সাহসই তাঁর জীবনের বিনিময়ে দিতে হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাওলানা কাউসার বিভিন্ন সময় এলাকায় মাদক বেচাকেনা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে কঠোর ভাষায় বক্তব্য রেখেছিলেন। শুধু বক্তব্য নয়, তিনি নিজের উপস্থিতিতে মাদক বেচাকেনা বন্ধে স্থানীয় পর্যায়ে সরাসরি প্রতিবাদ করেন। তাঁর এই অবস্থান স্থানীয় মাদক চক্রের জন্য হয়ে ওঠে বড় বাঁধা। বারবার হুমকি দেওয়ার পর, অবশেষে তারা তাঁর মুখ বন্ধ করে দেয়—চিরতরের জন্য।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ঈদের ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায় মাওলানা কাউসারকে একদল যুবক পিটিয়ে মেরে ফেলে। অভিযোগ উঠেছে, এই হামলার নেতৃত্ব দেন স্থানীয় যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কিছু প্রভাবশালী নেতা—যাদের পরিচয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নাম এসেছে যুবদলের নেতা সোহাগ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রিয়াদের। মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ‘অপরাধে’ একজন প্রবীণ ইমামকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

এই হত্যাকাণ্ডের পর গ্রামে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইমামের জানাজায় বহু মানুষ উপস্থিত থাকলেও, কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। কারণ আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে—’কে কথা বলবে, তাকেই পরবর্তী শিকার বানানো হবে।’ প্রশাসনও প্রথমদিকে নীরব ভূমিকা পালন করে, যদিও পরবর্তীতে গণমাধ্যমের চাপ ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার পর ঘটনাটি ধীরে ধীরে উঠে আসে আলোচনায়।

এখানেই প্রশ্ন ওঠে—একজন ধর্মীয় নেতা, যিনি সমাজে শান্তি ও নৈতিকতার বার্তা দেন, যিনি চিহ্নিত মাদক চক্রের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে অবস্থান নেন, তাঁর বিরুদ্ধে এই বর্বরতা কেন? কেন একটি দেশের প্রশাসন, রাজনীতি এবং সমাজ এতটাই নির্লিপ্ত, যেখানে সত্য বলার খেসারত দিতে হয় জীবন দিয়ে?

আরও গভীরভাবে ভাবতে গেলে দেখা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভাজনের রেখাগুলো এতটাই গভীর যে, কোন দল বা গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক রয়েছে, সেটাই নির্ধারণ করে তার জীবনের মূল্য। একজন মানুষ ভালো কাজ করলেও যদি তিনি অপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকেন, তবে তার পক্ষে কেউ দাঁড়ায় না—এমনকি মৃত্যুর পরেও না।

এটি শুধু একজন ইমামের মৃত্যু নয়, এটি সমাজের এক নিরব কিন্তু গভীর নৈতিক বিপর্যয়ের প্রতিচ্ছবি। রাষ্ট্র ও সমাজ যখন সত্যভাষীকে শত্রু মনে করে, তখন সেখানে নিঃশব্দ ফ্যাসিবাদের উত্থান অনিবার্য হয়ে ওঠে। কথায় কথায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বললেও, বাস্তবে দেখা যায়, নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরলেও তার বিচার হয় না, প্রতিবাদ হয় না, কারণ সে হয়তো ‘ভুল পরিচয়ের’ লোক।

একটি স্বাধীন দেশে একজন ইমাম মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাধে খুন হন, অথচ তা নিয়ে রাজনীতি হয়, কিন্তু বিচার হয় না—এ দৃশ্য শুধু লজ্জার নয়, ভয়াবহ বিপদেরও সংকেত। আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র, রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন ও মূলধারার গণমাধ্যম আজ যদি এই ঘটনার বিরুদ্ধে সরব না হয়, তাহলে আগামীকাল কার লাশ দেখা যাবে—তা বলা কঠিন।

মাওলানা কাউসারের মৃত্যু আমাদের জন্য কেবল শোকের নয়, এটি একটি জাগরণের ডাক। সমাজে সত্য বলার, মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার সাহস যেন হারিয়ে না যায়। নতুবা, যারা মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলে তারা একে একে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, আর সমাজে রাজত্ব করবে নেশা, সন্ত্রাস আর রাজনৈতিক ফায়দার নামে নির্মম নিঃশব্দ হত্যা।

একজন ইমামের লাশ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল—এই সমাজ এখনো জেগে ওঠেনি।
আমরা কি জেগে উঠব?

একটি বাংলাদেশ অনলাইন তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও নীরব ভালোবাসা জানায়।
মাওলানা কাউসার, আপনি ভুল ছিলেন না—আপনি সাহসী ছিলেন।
এদেশে এমন সত্যের মানুষের রক্ত বৃথা যাবে না—এই প্রত্যাশা রেখে সমাজের বিবেকবান মানুষদের জেগে উঠার আহ্বান জানাই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া