প্রকাশ: ১৫ই জুন ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয়েছে এমন এক সামরিক উত্তেজনা, যা ধীরে ধীরে শুধু আঞ্চলিক নয়, বরং বৈশ্বিক সংঘাতের সম্ভাবনাকে সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে। ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যকার এই সংঘর্ষে প্রযুক্তি, সামরিক কৌশল এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক জটিল মিশ্রণ তৈরি হয়েছে, যা গোটা বিশ্বকে শঙ্কিত করে তুলেছে।
ঘটনার সূত্রপাত ইরানি সংবাদমাধ্যমের এক বিস্ফোরক প্রতিবেদন থেকে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, সংঘাতের প্রথম দিনেই ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ অত্যন্ত নিখুঁতভাবে হ্যাক করে বসে ইরানের সমগ্র প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক। এই সাইবার হামলার মাধ্যমে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়ে, একটিও এয়ার ডিফেন্স ব্যাটারিও সাড়া দেয়নি। ইসরায়েল এই সুযোগে ইরানের অভ্যন্তরে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালায়—প্রায় প্রতিরোধহীন অবস্থায়।
তবে ইরানের প্রতিরক্ষায় বিপর্যয়ের এই পর্যায় স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। মাত্র ১৮ ঘণ্টার মধ্যেই চীন ও রাশিয়ার সরাসরি প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় ইরান তার ২,৫০০ এরও বেশি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যাটারিকে পুনরায় চালু করতে সক্ষম হয়। এই দ্রুত পুনর্বাসন এবং প্রতিরক্ষা সক্রিয়করণই পাল্টে দেয় পরিস্থিতির গতিপথ।
পরদিন, ইসরায়েল ফের আক্রমণে এগিয়ে এলে সম্পূর্ণ পাল্টে যাওয়া পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় তারা। ইরানের সক্রিয় ও সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মুখে পড়ে মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েলের অন্তত আটটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয় বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূত্রে দাবি করা হয়েছে। যদিও ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে মাত্র দুটি বিমানের ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে, আল জাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাস্তব সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি।
এদিকে, রাশিয়া ও চীনের অন্তত ১৫০ জন সামরিক ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বর্তমানে ইরানে অবস্থান করছেন এবং দেশটির প্রতিরক্ষা কাঠামোকে সক্রিয় ও সুসংহত করতে সরাসরি অংশগ্রহণ করছেন। অপরদিকে, ইসরায়েলকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া ইরানের বন্দর এলাকায় তিনটি যুদ্ধজাহাজ (ডেস্ট্রয়ার) মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রও নিজেদের বিমানবাহী রণতরী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।
এই উত্তেজনাকর পরিবেশে একদিকে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে এই সংঘাত আন্তর্জাতিক নীতিনৈতিকতার প্রশ্নও তুলে ধরেছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে ধরা পড়া ইসরায়েলি দুই পাইলটের মুক্তি দাবি করে বলেছে, ইরান যেন জেনেভা কনভেনশন অনুসরণ করে। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কিছু বলেনি যে ইসরায়েল কিভাবে আন্তর্জাতিক আইন বা সেই কনভেনশন অনুসরণ করে ইরানে হামলা চালিয়েছে।
ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আজ দাবি করেছে, তাদের হাইপারসনিক মিসাইল দিয়ে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দফতরে পিন-পয়েন্ট আঘাত হানা হয়েছে এবং সেই ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এই হামলা এতটাই নিখুঁত ছিল যে, দুই হাজার কিলোমিটার দূর থেকেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি। এই ঘটনায় তড়িঘড়ি করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রীসে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে, যা সামরিক উত্তেজনার মাত্রা কতটা তীব্র হয়েছে, তা প্রমাণ করে।
এমনকি এই সংকটময় পরিস্থিতিতে মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থানেও এসেছে নাটকীয় মোড়। একদিকে তিনি প্রথমে এই সংঘর্ষকে “চমৎকার” বলে অভিহিত করলেও, ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তার বক্তব্য বদলে গিয়ে দাঁড়িয়েছে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বানে।
সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত এখন এমন এক প্রান্তে পৌঁছেছে, যেখান থেকে যে কোনো মুহূর্তে তা পূর্ণমাত্রার আঞ্চলিক যুদ্ধ বা একটি বৃহৎ আন্তর্জাতিক সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। শুধু অস্ত্রের লড়াই নয়, এর পেছনে আছে ভূরাজনীতি, শক্তির ভারসাম্য, এবং বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক টানাপোড়েনের গভীর ছায়া।
এই বাস্তবতায় মানবিকতা, কূটনীতি ও বিবেকের তাগিদে গোটা বিশ্বের উচিত যুদ্ধ নয়, শান্তির পথে অগ্রসর হওয়া। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—আমরা কি সত্যিই সেই পথে এগোচ্ছি, নাকি এক অনিবার্য সংঘর্ষের দিকে হেঁটে চলেছি সবাই মিলে?