প্রকাশ: ১৮ই জুন ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনা এখন এক ভয়াবহ যুদ্ধের রূপ নিয়েছে। টানা ছয় দিনের সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্য পরিণত হয়েছে এক বিস্ফোরণময় যুদ্ধক্ষেত্রে। দু’পক্ষই একে অপরের উপর চালিয়েছে ব্যাপক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, যার ফলে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে এবং আরও অনেকে আহত হয়েছে।
ইসরায়েল গত কয়েকদিনে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় আঘাত হানে। এই হামলাগুলো ছিল অত্যন্ত নিখুঁত এবং কৌশলগতভাবে পরিচালিত, যার ফলে ইরানের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সহায়তায় ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মত।
এই পাল্টা হামলায় ইরানও চুপ করে বসে থাকেনি। তারা প্রায় ২০০টিরও বেশি ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে ইসরায়েলের দিকে। যদিও ইসরায়েলের অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা – যেমন আয়রন ডোম, ডেভিড’স স্লিং এবং অ্যারো সিস্টেম – এই হামলার বেশিরভাগই প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে, তবুও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কিছু অঞ্চল আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
বিশ্বরাজনীতিতে এই যুদ্ধ এক নতুন উত্তেজনার সূচনা করেছে। মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, “ইরানের উচিত এখনই আত্মসমর্পণ করা। না হলে যুক্তরাষ্ট্র এ বার সরাসরি জবাব দেবে।” অন্যদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এই ধরনের হুমকি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, “ইসরায়েল যদি আমাদের শহর ধ্বংস করে, আমরাও তাদের শহর ধ্বংস করব।”
এর ফলে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানিয়েছে। তুরস্ক, কাতার ও রাশিয়া যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে, এই যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক তেলবাজারও অস্থির হয়ে পড়েছে। অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৭৫ ডলার ছাড়িয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে কোনো বড় যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি আবার একবার ভয়াবহ ধাক্কা খাবে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেন, সিরিয়া, লেবানন, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। পাকিস্তান ও ভারতও সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এই পরিস্থিতিতে বলেন, “ইরান পতনের সময় খুব কাছাকাছি। আমরা মধ্যপ্রাচ্যের নতুন ইতিহাস লিখতে যাচ্ছি।” তার এই বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, ইসরায়েল কেবল ইরানকে নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যকেই তার নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যদি ধ্বংস হয়, তাহলে গোটা মুসলিম বিশ্বের ভূরাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে। আর কেউ আর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে না।
এই মুহূর্তে ইরান এক চরম প্রতিরোধ যুদ্ধে লিপ্ত, যা কেবল দেশটির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই নয়, বরং একটি বৃহত্তর ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আদর্শের জন্যও সংগ্রাম। যুদ্ধ যদি আরও দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, পুরো বিশ্বকেই এক অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
সারা দুনিয়ার দৃষ্টি এখন তেহরান ও তেলআভিভে। এই লড়াই থামাতে পারলেই কিছুটা স্বস্তি আসবে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধক্লান্ত মানুষের মনে। তবে সেই আশার আলো এখনো অনেক দূরে।