প্রকাশ: ১৯ই জুন ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যে উত্তেজনা ও সংঘাতের আবহ বিরাজ করছে, তার কেন্দ্রে রয়েছে ইরান-ইসরায়েল বিরোধ। ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একে একে নানা সংগঠন ও রাষ্ট্র যখন নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছে, তখন সবচেয়ে প্রভাবশালী ইসলামি রাজনৈতিক আন্দোলন ‘ইখওয়ানুল মুসলিমিন’ বা মুসলিম ব্রাদারহুড প্রকাশ করেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
সেই বার্তাটি ছিল একটি খোলা চিঠি, যা সম্প্রতি ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বা মুরশিদে আম ড. সালাহ আব্দুল হক স্বাক্ষরিত একটি আনুষ্ঠানিক নথির মাধ্যমে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খোমেনীর উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হয়।
চিঠির শুরুতেই ড. সালাহ ইরানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেন, দখলদার ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরান যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, তা শুধু মুসলিম বিশ্ব নয়, সমগ্র মানবতাবাদী সমাজের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। তিনি ইরানের শহীদ আলেম, সামরিক নেতৃত্ব এবং সাধারণ জনগণের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করেন।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ইসরায়েলের বর্তমান আক্রমণ শুধু ফিলিস্তিনকে নিঃশেষ করার প্রয়াস নয়, বরং গোটা মুসলিম উম্মাহকে দুর্বল করার একটি ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, দখলদাররা জানে—ফিলিস্তিনের প্রতিরোধের পেছনে যারা আছে, সেই শক্তিকেই ধ্বংস করতে হবে। আর তাই তারা ইরানের মতো রাষ্ট্র এবং ইখওয়ানের মতো প্রতিরোধকেন্দ্রিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে সক্রিয়।
চিঠিতে ইরান ও মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে ড. সালাহ বলেন, আমাদের শত্রু অভিন্ন—জায়োনবাদী ইসরায়েল। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হলে মুসলিমদের মধ্যে থাকা মতপার্থক্য ও বিভেদ ভুলে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে। তিনি মনে করিয়ে দেন, বিভক্ত উম্মাহর দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই জায়োনবাদ শক্তি এগিয়ে চলেছে।
চিঠির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে তিনি ইতিহাস, ধর্ম ও সভ্যতার দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলিম উম্মাহর অভিন্নতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এটি কেবল ধর্মীয় ঐক্য নয়, এটি আত্মিক ও কৌশলগত ঐক্যও। মুসলিমদের এই ঐক্যই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
তিনি আহ্বান জানান, উম্মাহর সক্রিয় শক্তিগুলোর কৌশলগত প্রচেষ্টাকে একটি সমন্বিত রূপরেখায় নিয়ে আসার জন্য, যাতে দখলদারদের মোকাবিলায় একটি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।
চিঠির এক পর্যায়ে ড. সালাহ আব্দুল হক মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ ইমাম হাসান আল বান্না (রহ.)-এর শিক্ষাকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, হাসান আল বান্নার শিক্ষা ছিল মতানৈক্যের মাঝেও ঐক্য, বিভেদের মাঝেও ভালোবাসা ও সহমর্মিতার দিকে এগিয়ে যাওয়া। তিনি ঘোষণা করেন, ইখওয়ান আজও সেই আহ্বানেই অবিচল।
সবশেষে তিনি কোরআনের আয়াত উল্লেখ করে বলেন, যারা আল্লাহ, রাসূল ও মুমিনদের পক্ষ নেয়, তাদেরই বিজয় অবধারিত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, মুসলিম উম্মাহ আবার ঐক্যবদ্ধ হবে, এবং এই জায়োনবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক কাতারে দাঁড়িয়ে বিজয় অর্জন করবে, ইনশাআল্লাহ।
এই চিঠি শুধু একটি বার্তা নয়, এটি বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মুসলিম রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে প্রতিরোধ শক্তির যেসব কণ্ঠ আজ উচ্চারিত হচ্ছে, ইখওয়ানুল মুসলিমিনের এই অবস্থান সেই কণ্ঠগুলোকে আরও শক্তিশালী ও নৈতিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করবে বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা।