সর্বশেষ :
‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের আরও চেপে ধরছে খেলাপি ঋণ: আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২৭,১৮৯ কোটি টাকা অনাদায়ী ইহুদিবাদী ইসরাইলের সামরিক কারখানায় ‘সাইবার হামলা’, ৬ টেরাবাইট তথ্য চুরি করল হ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ ‘ভাই এডিট করে ছবি দে সমস্যা নাই, জাতের কারও দে’—শবনম ফারিয়ার সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি বার্তা আইইএলটিএসে মাত্র ৭ স্কোর করলেই সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ চাল-সবজির বাজারে ঊর্ধ্বমুখী দাম, মুরগি-ডিমে সামান্য শিথিলতা আবার প্রাণ ফিরে পেল রোহিঙ্গা শিক্ষাকেন্দ্র: স্থানীয় শিক্ষক পুনর্বহালের আশ্বাসে আশায় আশ্রয়শিবির

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ব্যালিস্টিক মিসাইলের রহস্য: কীভাবে কাজ করে এই অস্ত্র?

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫
  • ২৯ বার

২১শে জুন, ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক

মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সামরিক সংঘাতে ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রযুক্তি একটি আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এই অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন জাগ্রত হয়েছে, বিশেষ করে যখন বিবেচনা করা হয় যে ইরাক ও জর্ডানের মতো মধ্যবর্তী রাষ্ট্রসমূহের উপস্থিতি সত্ত্বেও এই মিসাইলগুলো কিভাবে এক দেশ থেকে আরেক দেশে সফলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান অনুযায়ী প্রতিটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের আকাশসীমা ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বলে স্বীকৃত। এই সীমানার মধ্যে কোনো বিদেশী বিমান বা উড়ন্ত বস্তুর অনুপ্রবেশ সেই দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের শামিল। সাধারণ বাণিজ্যিক বিমান চলাচল করে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার উচ্চতায়, যা এই আকাশসীমার মধ্যেই পড়ে। তবে ব্যালিস্টিক মিসাইলের কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির, যা প্রচলিত আকাশসীমা ধারণাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়।

একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইলের গতিপথকে মূলত তিনটি স্বতন্ত্র পর্যায়ে বিশ্লেষণ করা যায়। প্রথম পর্যায়ে মিসাইলটি তার উৎক্ষেপণ স্থান থেকে উল্লম্বভাবে উপরের দিকে উঠতে থাকে, সাধারণত ২ থেকে ৫ মিনিট সময় নিয়ে ১৫০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতা অর্জন করে। এই পর্যায়ে এটি উৎক্ষেপণকারী দেশের আকাশসীমার মধ্য দিয়েই চলাচল করে।

দ্বিতীয় ও সবচেয়ে দীর্ঘতম পর্যায়ে মিসাইলটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে মহাশূন্যে প্রবেশ করে। এই মহাশূন্য অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক আইনে ‘কোনো দেশের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত এলাকা’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানে মিসাইলটি ১,২০০ থেকে ১,৫০০ কিলোমিটার উচ্চতায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট ধরে তার গতিপথ অতিক্রম করে।

তৃতীয় ও চূড়ান্ত পর্যায়ে মিসাইলটি পুনরায় বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং মহাকর্ষীয় টানে লক্ষ্যবস্তুর দিকে ধেয়ে আসে। এই সময় এর গতি ঘণ্টায় ১৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে, যা প্রচলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম।

এই প্রযুক্তির ব্যাপকতা বোঝার জন্য বিভিন্ন উড়ন্ত বস্তুর উচ্চতা ও গতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। সাধারণ বাণিজ্যিক বিমান ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার উচ্চতায় ঘণ্টায় ৮০০ থেকে ৯০০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের স্ট্রাটোস্ফিয়ার স্তর ৫০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থান করে। একটি সাধারণ ব্যালিস্টিক মিসাইল ৩০০ থেকে ১,৫০০ কিলোমিটার উচ্চতা অতিক্রম করে, যেখানে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল ১,২০০ থেকে ১,৫০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম।

সাম্প্রতিক সংঘাতে ইরান কর্তৃক ব্যবহৃত হাইপারসনিক মিসাইল প্রচলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এই বিশেষ ধরনের মিসাইল ঘণ্টায় ৬,০০০ কিলোমিটার গতি অর্জন করতে পারে, যা শব্দের গতির পাঁচ গুণ। এছাড়া উড়ন্ত অবস্থায় গতিপথ পরিবর্তনের ক্ষমতা এবং প্রচলিত রাডার সিস্টেম দ্বারা শনাক্তকরণে অসুবিধা এই অস্ত্রকে বিশেষভাবে বিপজ্জনক করে তোলে।

ইসরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা সাধারণ রকেট ও মিসাইল মোকাবেলায় অত্যন্ত কার্যকর বলে বিবেচিত, হাইপারসনিক মিসাইলের বিরুদ্ধে তার কার্যকারিতা হারায়। এর প্রধান কারণ হিসেবে শনাক্তকরণে বিলম্ব, ইন্টারসেপ্ট করার জন্য সময়স্বল্পতা এবং গতিপথ অনিশ্চয়তাকে চিহ্নিত করা যায়। অত্যধিক গতির কারণে রাডারে ধরা পড়তে দেরি হয় এবং শনাক্ত করার পর প্রতিক্রিয়া জানানোর পর্যাপ্ত সময় থাকে না।

এই প্রযুক্তির উত্থান আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা কাঠামোতে গভীর প্রভাব ফেলছে। এটি একটি নতুন ধরনের অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পারমাণবিক অস্ত্র বহন ক্ষমতাসম্পন্ন এই মিসাইলগুলো বিদ্যমান অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা বাজেটে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে এই প্রযুক্তির প্রভাবে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ১৯৪৪ সালে জার্মানির ভি-২ রকেটকে প্রথম ব্যালিস্টিক মিসাইল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঠান্ডা যুদ্ধকালে আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে এই প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। বর্তমানে বিশ্বের至少 ৯টি দেশ এই প্রযুক্তির অধিকারী, যার মধ্যে আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং ইসরায়েল অন্যতম।

বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের জন্য এই প্রযুক্তির তাৎপর্য বহুমাত্রিক। আঞ্চলিক শক্তি ভারসাম্যে পরিবর্তন আসতে পারে, যা প্রতিরক্ষা কৌশল পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে। এছাড়া সাইবার সিকিউরিটি ও মহাকাশ নিরাপত্তা সংক্রান্ত নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি হয়ে উঠেছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে আগামী দশকে হাইপারসনিক অস্ত্র আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন ধরনের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উদ্ভব ঘটবে বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন। মহাকাশভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক আইনে নতুন নিয়ম প্রণয়নের দাবি জোরালো হবে।

এই প্রযুক্তির বিস্তার ও উন্নয়ন আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি জটিল চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার সমাধান খুঁজতে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া