প্রকাশ: ৩০শে জুন ২০২৫
নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছে রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহিরা বিনতে মারুফকে। রোববার (২৯ জুন) দিবাগত রাতে সাভার এলাকা থেকে জীবিত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিখোঁজ হওয়ার প্রায় একদিন পর তাকে পাওয়া গেলেও, কীভাবে বা কেন সে নিখোঁজ হয়েছিল—এ প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যরা এবং পুলিশ উভয়েই ঘটনার পেছনের কারণ সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেনি।
প্রসঙ্গত, রোববার সকালে রাজধানীর ভাটারা থানার অন্তর্গত এলাকার নিজ বাসা থেকে মিরপুর কলেজে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বের হয়েছিলেন মাহিরা। তার বোন মারিয়া বিনতে মারুফ জানান, সকাল ৮টার দিকে মাহিরা বাসা থেকে বের হন। কিন্তু পরীক্ষার কেন্দ্রে তিনি পৌঁছাননি এবং এরপর থেকে তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। পরিবার ও স্বজনেরা নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও কোনো খোঁজ না পেয়ে রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জিডিতে উল্লেখ করা হয় যে, মাহিরা বিনতে মারুফ, ডাকনাম পিউলি, সকালবেলা মিরপুর কলেজে পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। অথচ নির্ধারিত কেন্দ্রে তার উপস্থিতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন, কিন্তু কোথাও মাহিরার সন্ধান মিলছিল না। নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তার পরিবার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মাহিরার ছবি ও খোঁজ চেয়ে বিভিন্ন পোস্ট।
অবশেষে ২৯ জুন দিবাগত রাতে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতায় সাভার থেকে মাহিরাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তাকে সেখান থেকে নিয়ে এসে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং বর্তমানে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মেয়েটি এখন নিরাপদে আছে এবং প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তার মাধ্যমে ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।
এদিকে মাহিরার উদ্ধার হলেও জনমনে উত্থাপিত হয়েছে একাধিক প্রশ্ন—এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার দিন সকালে হঠাৎ করে একজন শিক্ষার্থী কীভাবে নিখোঁজ হয়ে যায়? তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেল কেন? তার ওপর কোনো ধরনের চাপ, বিপদ বা প্রলোভন কাজ করেছিল কি না, অথবা সে নিজে ইচ্ছাকৃতভাবে কোথাও গিয়েছিল কি না—এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি।
ঘটনার গভীরতা এবং একটি শিক্ষার্থীর নিখোঁজ হওয়ার মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আরও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি, মাহিরার পরিবারও চায়, পুরো বিষয়টি স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে সামনে আসুক এবং কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কেউ বলছেন এটি কোনো পারিবারিক কারণে ঘটতে পারে, কেউ বলছেন এটি নিছকই কোনো পরিকল্পিত অপহরণ, আবার কেউবা এটিকে দেখছেন মানসিক চাপ বা পরীক্ষার আতঙ্কের ফল হিসেবে। তবে পুলিশ সুস্পষ্ট করে জানিয়েছে, সকল দিক বিবেচনায় তদন্ত করা হচ্ছে এবং প্রকৃত তথ্য উদঘাটন ছাড়া কোনো কিছু ধরে নেওয়া হবে না।
এইচএসসি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে সারাদেশে ২২ হাজার ৩৯১ পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিত থাকা এবং ৪১ জন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারের খবরের মাঝেই মাহিরার ঘটনাটি ছিল একটি বিশেষ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে নতুন করে ভাবনার সময় এনে দিলো এই ঘটনা।
মাহিরার মতো আর কোনো শিক্ষার্থী যাতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার না হয়, সেজন্য অভিভাবক, শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও সংবেদনশীল ও সতর্ক ভূমিকা প্রয়োজন—এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মাহিরার প্রতি সবার সহানুভূতি থাকলেও, এই ঘটনার নেপথ্যের সত্য উদঘাটন এখন সময়ের দাবি।