সর্বশেষ :
ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন আবুধাবিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর কপাল খুললো: লটারি জিতলেন ৭৫ কোটি টাকা কোচ কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় বাফুফের কমিটি থেকে বাদ শাহীন ‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের

ট্রাম্পের শুল্কনীতির ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, হুমকির মুখে চাকরির বাজার

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫
  • ৩ বার
ট্রাম্পের শুল্কনীতির ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, হুমকির মুখে চাকরির বাজার

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির এক মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পূর্ববর্তী নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী একের পর এক নতুন শুল্ক আরোপ করছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর। তবে তার এই কঠোর বাণিজ্য নীতির প্রভাব এখন আমেরিকান সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিক্রিয়ায় দেশের অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছে চাপ, কমেছে বিনিয়োগ, বেড়েছে বেকারত্ব, আর ভোক্তাদের ব্যয়ের হারও নিচের দিকে নেমেছে। ফলে মার্কিন অর্থনীতি পড়েছে এক অস্বস্তিকর অস্থিরতার ভেতর।

বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক আস্থা এক অনাকাঙ্ক্ষিত নিম্নমুখী ধারায় পড়েছে। শুধুমাত্র এপ্রিল থেকে মে মাসে খুচরা বিক্রি কমেছে প্রায় ০.৯ শতাংশ, যা অর্থনীতির স্থবিরতার স্পষ্ট ইঙ্গিত। ২০২০ সালের পর এই প্রথমবার, একটি প্রান্তিকে ভোক্তা ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি এতটা ধীর ছিল। মে মাসে আমেরিকান নাগরিকেরা খরচ কমিয়ে দেওয়ায় অর্থনীতির ভেতরের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে আরও স্পষ্টভাবে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে চাকরির বাজার। কিন্তু বর্তমানে বেকারত্বের হার ৪.২ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। যদিও নতুন নিয়োগের হার এখনও তুলনামূলকভাবে সন্তোষজনক, তবে ছাঁটাইয়ের গতি এবং নিয়োগে সংকোচনের প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে।

চার্লস শোয়াব করপোরেশনের প্রধান বিনিয়োগ কৌশলবিদ লিজ অ্যান স্যান্ডার্স বিষয়টিকে আরও গভীরভাবে ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমরা বর্তমানে এক অচলাবস্থার মুখে রয়েছি। নীতিনির্ধারণে অনিশ্চয়তা কোম্পানিগুলোর জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। এতে তারা বিনিয়োগ থেকে দূরে থাকছে, কর্মী নিয়োগেও সংযত হচ্ছে।”

ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, চীনের ওপর সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়। ফলাফলস্বরূপ, ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতন শুরু হয়। পরিস্থিতির আরও অবনতির সূচনা ঘটে এপ্রিল মাসে ‘লিবারেশন ডে’ ঘোষণার পর। ঐ সময় এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক মাত্র এক সপ্তাহে প্রায় ১২ শতাংশ পড়ে যায়।

পরবর্তীতে, ট্রাম্প উচ্চ শুল্ক হ্রাস করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিলে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হতে শুরু করে। যদিও এই অবস্থান সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে, তবে সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়েছে খুচরা পণ্য বিক্রেতা এবং গাড়ি উৎপাদন খাত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ শুল্কের কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে কর্মসংস্থানের ওপরও চাপ ফেলবে।

শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনা নিয়েও হোয়াইট হাউসের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট। কখনও বলা হচ্ছে, সময়সীমা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আবার কখনো বলা হচ্ছে, ট্রাম্প একটি “সম্ভাব্য চুক্তি” করতে পারেন। এই দ্বিধাদ্বন্দ্বে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা আরও গভীর হয়েছে। তাদের আশঙ্কা—যদি ট্রাম্প পূর্বঘোষিত তুলনায় আরও বেশি শুল্ক আরোপ করেন, তবে বাজার পুনরায় বড় ধাক্কা খেতে পারে।

তবে ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে যে, ভিয়েতনামের সঙ্গে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে কিছু পণ্যে আমদানি বাড়লেও সামগ্রিকভাবে আমদানি ব্যাহত হয়েছে, যার ফলে কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে, বিশেষ করে খেলনা ও ইলেকট্রনিক পণ্য খাতে।

অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, শেষ পর্যন্ত এই শুল্কনীতির ভার গিয়ে পড়বে সাধারণ মার্কিন নাগরিকের ওপর। তারা বলছেন, ‘যদিও মূল্যস্ফীতি এখন নিয়ন্ত্রিত বলে মনে হচ্ছে, বাস্তব চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নীরবে।’ বিনিয়োগ কৌশলবিদ লিজ অ্যান স্যান্ডার্সের মতে, আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই—যতদিন না পর্যন্ত বাজারে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।

উল্লেখযোগ্য যে, আগামী ৯ জুলাই ট্রাম্পের স্থগিত শুল্ক নীতিমালার সময়সীমা শেষ হচ্ছে। পুরো দেশ অপেক্ষায় রয়েছে, প্রেসিডেন্টের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে। এই সিদ্ধান্ত শুধু দেশের বাজারকে নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করবে। তাই শুধু মার্কিন নাগরিক নয়, গোটা দুনিয়াই তাকিয়ে আছে হোয়াইট হাউসের পরবর্তী নীতিকথনের দিকে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া