প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতপূর্ণ প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের অবস্থান নিয়ে চাঞ্চল্যকর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ‘ইসরাইল হাইওম’। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সৌদি আরব প্রকাশ্যে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরোধিতা করলেও বাস্তবে গোপনে তেলআবিবকে সহায়তা করেছে—এমনকি ইরানের ছোড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে রিয়াদ। এই খবর ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তীব্র আলোড়ন তুলেছে।
ইসরাইল হাইওমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সাম্প্রতিক ১২ দিনের ইসরাইল-ইরান সংঘাতে সৌদি আরব তাদের আকাশসীমা, এমনকি প্রতিবেশী জর্ডান ও ইরাকের আকাশ ব্যবহার করে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে ইরান থেকে আসা ড্রোন প্রতিহত করেছে। যদিও এ নিয়ে রিয়াদ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। বরং ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়ে তারা বলেছে, সৌদি আকাশসীমা ব্যবহার করে ইরানের ভূখণ্ডে হামলা চালাতে দেওয়া হবে না।
অবশ্য সৌদি আরবের অবস্থান নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। ফিলিস্তিন ইস্যুতে বহুদিন ধরেই দেশটির দ্বৈতনীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একদিকে সৌদি সরকার গাজায় ইসরাইলি হামলার নিন্দা করে বিবৃতি দেয়, অন্যদিকে প্রায়ই কোনো কার্যকর অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়। এবার ইসরাইলি ড্রোন প্রতিরোধে সহায়তার খবর সামনে আসায় এই সমালোচনা আরও ঘনীভূত হলো।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরবের বিমান বাহিনী ইরানের চালকবিহীন আকাশযানগুলো লক্ষ্য করে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জর্ডান, ইরাক ও নিজ দেশের আকাশসীমায় হেলিকপ্টার মোতায়েন করে তারা ইরানি ড্রোন ধ্বংস করেছে বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও এতে রিয়াদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই, তবে ইসরাইলি সূত্রগুলো এই সহযোগিতাকে ‘প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ’ বলে উল্লেখ করেছে।
সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী বিমান বাহিনী পরিচালনা করে। দেশটির অধিকাংশ সামরিক সরঞ্জাম, ফাইটার জেট, রাডার সিস্টেম ও এয়ার ডিফেন্স যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত। এই প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সৌদিকে এমন মিশনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম করেছে বলে বিশ্লেষকদের মত।
এদিকে, গাজায় চলমান দখলদারিত্ব ও মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে সৌদি আরবের ভূমিকা বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৭,১৩০ জন ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯২ জন। এই মানবিক সংকটের মাঝেও সৌদি আরব ইসরাইলবিরোধী কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দা বাড়ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরবের এই দ্বিমুখী কূটনীতি শুধু মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণকেই জটিল করছে না, বরং মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নও তৈরি করছে। মুখে ইসরাইলবিরোধী অবস্থান নিলেও গোপনে তেলআবিবকে সহযোগিতা করা যেন এখন রিয়াদের নতুন পরিচয় হয়ে উঠছে।
এমন অবস্থায় মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন সৌদি সরকারের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যার দিকে। কারণ, যদি এই সহযোগিতার তথ্য সত্য হয়, তবে তা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ভারসাম্যে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে—বিশেষ করে সৌদি-ইরান সম্পর্ক ও ফিলিস্তিন প্রশ্নে বিশ্বজুড়ে সৌদির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলতে পারে।