সর্বশেষ :
আওয়ামী লীগের নিরপরাধদের বিরুদ্ধে জুলুম নয়, শৃঙ্খলিত সমাজের আহ্বান রাশেদ খানের সিরিজ হার নয়, আজ লড়াই বিশ্বাস ফিরে পাওয়ার জাকির খানের নেতৃত্বে কোকোর কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন, আজিমপুরে প্রয়াত এমপিকেও স্মরণ পুরনো ভবনের ধস করাচিতে কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ, ধ্বংসস্তূপে আটকা বহু মানুষ আত্মঘাতী গোলেই স্বপ্নভঙ্গ পালমেইরাসের, সেমিফাইনালে চেলসির নাটকীয় উত্থান ডিম নিয়ে ভুল ধারণার অবসান: কতটুকু খাবেন, কীভাবে খাবেন জানুন বিশদে” ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন

কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকে ভারতের নিরবতা কি ইসরাইলের প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়?

একটি বাংলাদেশ অনলাইন
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫
  • ১০ বার
কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকে ভারতের নিরবতা কি ইসরাইলের প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়?

প্রকাশ: ১৬ জুন, ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা যখন চরমে, তখন ইসরাইলের সাম্প্রতিক ইরানভিত্তিক হামলা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে। তেহরানসহ বেশ কয়েকটি ইরানি শহরে চালানো এই হামলায় নিহত হয়েছে দুই শতাধিক মানুষ, যাদের মধ্যে সাধারণ বেসামরিক নাগরিক, গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু বিজ্ঞানী এবং ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)-এর শীর্ষ পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তাও রয়েছেন। এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মহলের বড় অংশ আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী বললেও, দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শক্তি ভারত কোনো ধরনের নিন্দা বা প্রতিবাদ জানায়নি। বরং, আন্তর্জাতিক চাপ এবং আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যেও নয়াদিল্লি কৌশলগতভাবে নীরব থেকেছে।

এই অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় কূটনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা। বিশেষ করে, চীনের নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক জোট সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও)-এর একটি বিবৃতিতে যখন ইসরাইলের এই হামলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়, তখন ভারত ওই বিবৃতি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলের হামলা ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে এবং এটি শুধু আঞ্চলিক নয়, বরং বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। তাতে স্বাক্ষর না করে ভারত জানিয়েছে, তারা ওই আলোচনায় অংশ নেয়নি এবং বিবৃতিটি অনুমোদনও করেনি।

ভারতের এই অবস্থান ইরানের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং এসসিও’র সদস্যপদকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কেননা, ইরান ও ভারত উভয়ই এই জোটের পূর্ণ সদস্য এবং অতীতে উভয় দেশ বহুবার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরস্পরের পাশে থেকেছে। বিশেষ করে চাবাহার বন্দরসহ ইরানে ভারতের বহু বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে এবং জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রেও ইরান ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল, যদিও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর তা অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে।

অন্যদিকে, ইসরাইলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বিগত দুই দশকে বিশেষভাবে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তায় ইসরাইল ভারতের অন্যতম বড় অংশীদার। গাজা যুদ্ধে ভারতের বেশ কয়েকটি প্রতিরক্ষা কোম্পানি সরাসরি ইসরাইলে অস্ত্র রপ্তানি করেছে বলেও তথ্য রয়েছে। এর ফলে, অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, নয়াদিল্লির অবস্থান পুরোপুরি একটি কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টা— যেখানে তারা একদিকে ইসরাইলকে verifiably বিরক্ত করতে চাইছে না, অন্যদিকে ইরানের সঙ্গে সম্পর্কও একেবারে ত্যাগ করছে না।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এই হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। তবে সেই আলাপে ইসরাইলকে দায়ী না করে বরং উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এই নিরপেক্ষ অবস্থান বাস্তবে কতটা কার্যকর এবং নৈতিক, তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

বিশ্লেষক কবীর তানেজা মনে করেন, ভারতের এই অবস্থান মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনার প্রেক্ষাপটে নির্ধারিত হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন জুলাই মাসের মধ্যেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারে— এমন একটি আশঙ্কা থেকে ভারত কৌশলগতভাবে ওয়াশিংটনের বিপক্ষে কোনো অবস্থানে যেতে চাইছে না। ইসরাইলও যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায়, ওই দেশটির প্রতি সরাসরি কোনো সমালোচনার পথে যেতে ভারত আপাতত রাজি নয়।

এই বাস্তবতায় ভারত এখন এক ধরনের সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টায় ব্যস্ত। একদিকে এসসিও’র চীন-রাশিয়া-ইরান নেতৃত্বাধীন জোট থেকে নিজেকে কিছুটা দূরে রাখছে, অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সঙ্গে ভবিষ্যৎ বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সুযোগ ধরে রাখতে চাইছে। তবে এমন অবস্থান দীর্ঘস্থায়ীভাবে কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করছে ইরান-ইসরাইল সংঘাত কোন দিকে গড়ায় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভারসাম্য কোথায় গিয়ে ঠেকে তার ওপর।

ভারতের এই নীরবতা বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়ের প্রশ্নেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেয়। যে দেশ নিজেকে উদীয়মান শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করছে, তার উচিত ছিল একটি মানবিক বিপর্যয়ের সময়ে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো এবং জাতিসংঘ সনদের মৌলিক আদর্শ রক্ষা করা। কিন্তু কৌশলগত স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক জোটগত সমীকরণের সামনে এই নৈতিক দায়বদ্ধতা আজ স্পষ্টতই পেছনে পড়ে গেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া