প্রকাশ: ২৬শে জুন, ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
মানুষের জীবন চঞ্চল, গর্বিত ও কর্মমুখর। কিন্তু এর এক নির্মম, অদৃশ্য, এবং অবধারিত শেষপ্রান্ত আছে—মৃত্যু। এই মৃত্যু যেন এক চরম সমতা, যেখানে রাজা ও প্রজা, ধনী ও দরিদ্র, বুদ্ধিজীবী ও অজ্ঞ—সবাই এক সমতলে এসে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া এবং আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে যা আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে, মৃত্যুর পরে শরীরের পরিবর্তন, পচন ও বিলীন হয়ে যাওয়ার বাস্তবতা সম্পর্কে। এই বিশ্লেষণ শুধুমাত্র ধর্মীয় বোধ নয়, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও আমাদের আত্মবিশ্লেষণের দরজা খুলে দেয়।
মৃত্যুর ঠিক ২৪ ঘণ্টা পর থেকে মানুষের দেহে শুরু হয় এক প্রাকৃতিক ও অবধারিত পরিবর্তন। শরীরের অভ্যন্তরে জন্ম নিতে থাকে ক্ষুদ্র এক ধরনের পোকা বা কীট, যা শরীরের গোপন ছিদ্র দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসে। বিশেষত, পায়ুপথ থেকে এগুলোর বের হওয়া শুরু হয় এবং সেই সঙ্গে সৃষ্টি হয় এক তীব্র দুর্গন্ধ, যা সাধারণভাবে সহ্য করা অসম্ভব। এই গন্ধ একটি বিশেষ ধরনের রাসায়নিক সংকেত হিসেবে কাজ করে যা একই প্রজাতির অন্যান্য পোকামাকড়, বিছে এবং কীটপতঙ্গকে আকর্ষণ করে। তারা তখন একত্রিত হয়ে মৃতদেহকে কেন্দ্র করে ছুটে আসে এবং ধীরে ধীরে শুরু হয় শরীরকে ভক্ষণ করার এক নিষ্ঠুর প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া।
এই প্রক্রিয়া নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত থাকে। মৃত্যুর তিন দিন পর মৃত ব্যক্তির নাকের কোষগুলো দ্রুত পচে যেতে শুরু করে। ছয় দিনের মাথায় শরীরের নখগুলো আলগা হয়ে খসে পড়ে। নয় দিন পেরোলে চুল ঝরে পড়তে থাকে এবং শরীরের সমস্ত লোম বিলীন হয়ে যায়। এরপর পেট ফুলতে শুরু করে, এবং ১৭ দিন পর পেটের দেয়াল ফেটে গিয়ে দেহের অভ্যন্তরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বাইরে বেরিয়ে আসে। এ যেন প্রকৃতির এক নিঃশব্দ অথচ কঠিন সিদ্ধান্ত, যে শরীরের কোনো মর্যাদা আর অবশিষ্ট থাকলো না।
এই প্রক্রিয়ার ষাট দিনের মাথায় মৃতদেহের সমস্ত মাংস অদৃশ্য হয়ে যায়—এক ফালি মাংসও অবশিষ্ট থাকে না। নব্বই দিন পর হাড়গুলো আলাদা হতে শুরু করে, একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এক বছরের মধ্যে দেহের সমস্ত হাড় মাটির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়। যে মানুষটি কখনো দাপটের সঙ্গে সমাজে চলাফেরা করত, যার এক ডাকে লোকে জড়ো হতো, যার প্রতিপত্তি, অর্থসম্পদ, খ্যাতি ও ক্ষমতা ছিল—সবই হারিয়ে যায় এক অদৃশ্য শূন্যতায়। তার কবরটি হয়তো পড়ে থাকে একটি নির্জন জায়গায়, কিন্তু কালের স্রোতে তা-ও হারিয়ে যায়।
এই বাস্তবতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় মানুষের শরীর ও পদমর্যাদার ক্ষণস্থায়ীতা। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়—মানুষ এত অহংকার করে কী নিয়ে? এত হিংসা, লোভ, বিত্ত-বৈভবের প্রতিযোগিতা—সবকিছুই কি এই ক্ষয়প্রাপ্ত ও বিলুপ্ত হাড়-মাংসের জন্য? এই জীবনের সীমাবদ্ধতা কি আমাদের মনে করিয়ে দেয় না যে সত্যিকারের গুরুত্ব থাকা উচিত আত্মার পরিশুদ্ধি, চরিত্রের গঠন ও মানবিকতায়?
বিজ্ঞান ও ধর্ম, দুটি পথই এখানে একই বার্তা বহন করে: মানুষের শরীর ক্ষণিকের, আত্মা চিরন্তন। আমাদের উচিত সেই চিরন্তন আত্মার কল্যাণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত আমরা যদি ভাবি—এই জীবন একদিন ফুরাবে, একদিন আমাকেও ঐ পাঁচ বা ছয় ফুট গর্তে নামতে হবে, একদিন আমিও হারিয়ে যাবো সকল পরিচিত মুখ থেকে, তাহলেই হয়তো আমরা মানুষ হিসেবে বিনয়ী হতে পারবো, ক্ষমাশীল হতে পারবো, এবং পরার্থপরতায় নিজেকে সমর্পণ করতে পারবো।
এই বার্তাই ছড়িয়ে দিয়েছে এক অনলাইন আলোচনার সূত্র ধরে যে বার্তাটি আজ সামাজিক মাধ্যম ছাড়িয়ে আমাদের বিবেককে নাড়া দিচ্ছে। এই খবরটি শুধু একটি শারীরিক প্রক্রিয়ার বিবরণ নয়—এটি এক বাস্তবতার দলিল, এবং আমাদের অহংকারের বিপরীতে এক নির্ভুল স্মরণিকা। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সবাইকে সেই বোঝার, উপলব্ধি করার ও পরিবর্তনের তৌফিক দান করেন। আমিন।