প্রকাশ: ২৭শে জুন ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
চট্টগ্রাম মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ রেল পরিবহন রুটে আবারও ঘটেছে তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে নগরের সল্টগোলার এমবিপি গেট এলাকায় জ্বালানি তেল পরিবহনকারী একটি ট্রেনের চারটি ওয়াগন রেললাইন থেকে ছিটকে পড়ে। ঘটনার পর রাত থেকেই উদ্ধারকাজ শুরু হলেও শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে মাত্র দুটি ট্যাংকার। বাকি দুটি উদ্ধারে এখনও কাজ চলছে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, লাইনচ্যুত হওয়া ট্যাংক ওয়াগনগুলো খালি ছিল এবং সেগুলো নগরের চিটাগং গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে নিউমুরিং এলাকার বিভিন্ন তেল কারখানার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। তেল সংগ্রহ শেষে এগুলো হাটহাজারী, দোহাজারী, সিলেট ও রংপুরের বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সল্টগোলার এমবিপি গেট এলাকায় পৌঁছানোর পরই চারটি ওয়াগন রেললাইন থেকে ছিটকে পড়ে। দুর্ঘটনার কারণ এখনো নির্ধারিত হয়নি, তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে রেললাইনের যান্ত্রিক ত্রুটি কিংবা ভারসাম্যহীনতা এর পেছনে দায়ী হতে পারে।
নিউমুরিং রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার মোহাম্মদ আলাউদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, “রাতের বেলায় ট্যাংকারগুলো খালি অবস্থায় নিউমুরিংয়ে যাচ্ছিল তেল ভরার জন্য। সিজিপিওয়াই থেকে রাতেই এগুলো যাত্রা শুরু করে। দুপুরে তেল ভরে বিকেলে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু লাইনচ্যুতির ঘটনায় পুরো কার্যক্রমই ব্যাহত হয়েছে।”
এই দুর্ঘটনার ঠিক আট দিন আগে, ১৯ জুন চট্টগ্রাম নগরের আমিন জুট মিল থেকে অক্সিজেন সেকশন এলাকায় জ্বালানিবাহী আরেকটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। সেদিন দুপুরে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কারণে চট্টগ্রাম মহানগর থেকে হাটহাজারীর বিদ্যুৎকেন্দ্র অভিমুখী রেলযোগাযোগ প্রায় চার ঘণ্টা বন্ধ থাকে। পরপর দুটি জ্বালানিবাহী ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হওয়ায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। যেহেতু এসব ট্রেনে জ্বালানি তেল বহন করা হয়, তাই এ ধরনের দুর্ঘটনা শুধু পরিবহন ব্যবস্থায় বিঘ্নই ঘটায় না, বরং বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কাও তৈরি করে।
রেলওয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, “তেল পরিবহনের ট্রেনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু সেগুলো জ্বালানি পরিবহনে ব্যবহৃত হয়, তাই দুর্ঘটনাগুলোর প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। তবে কেন বারবার একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে।”
চট্টগ্রাম মহানগরের মতো জনবহুল এবং শিল্পকারখানায় পরিপূর্ণ এলাকায় বারবার জ্বালানিবাহী ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝেও বাড়ছে উদ্বেগ। নিরাপত্তার প্রশ্নে তারা রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্বচ্ছতা ও দ্রুত প্রতিকারমূলক পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
রেলওয়ের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো স্থায়ী সমাধানের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়নি, তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তেলবাহী ট্রেন চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খুব শিগগিরই পুরনো রেলপথের মেরামত, ওয়াগনের মানোন্নয়ন এবং নিয়মিত পরিদর্শনের মতো কার্যক্রম শুরু করা হবে।
পরপর দুইটি দুর্ঘটনার পর দেশের রেলপথে বিশেষ করে তেলবাহী ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের ওপর জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং মানব সম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি। অন্যথায় ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঝুঁকি