প্রকাশ: ২৮শে জুন ২০২৫ | নিজস্ব প্রতিবেদক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
চট্টগ্রামে আবারও কোভিড-১৯ এর থাবায় প্রাণ হারালেন একজন নারী। ৪০ বছর বয়সী সালেহা বেগম নামের এই নারী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। শুক্রবার দিবাগত রাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, যা শনিবার সকালে নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। একইসাথে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৬ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মৃত সালেহা বেগম চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি আগে থেকেই হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসসহ একাধিক শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। এর মধ্যেই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে তাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ কয়েকদিন ধরে কোভিড ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শুক্রবার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তার করোনা সংক্রমণটি বিদ্যমান শারীরিক জটিলতাগুলিকে আরও মারাত্মক করে তোলে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪ জন নগর এলাকার বাসিন্দা এবং বাকি ২ জন বিভিন্ন উপজেলার। পরীক্ষার জন্য তারা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা দেন, যেখানে শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৪ জন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে ২ জনের পজিটিভ ফলাফল আসে।
করোনার এই নতুন সংক্রমণ আবারও আশঙ্কা তৈরি করছে স্বাস্থ্য মহলে। বিশেষ করে জুন মাসের শুরু থেকে সংক্রমণের যে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে, তা স্বাস্থ্যসেবা খাতে নতুন করে চাপ তৈরি করছে। গত ৪ জুন থেকে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১৩০ জন এবং এই সময়ে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৭ জন।
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবার শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে শৈথিল্য, কমিউনিটি পর্যায়ে ভাইরাসের নতুন রূপের সংক্রমণ, এবং গ্রীষ্মকালে ভাইরাসের উচ্চ সক্রিয়তা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এরইমধ্যে পরীক্ষার হার বাড়ানোর পাশাপাশি, ঝুঁকিপূর্ণদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে কোভিড ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পুনরায় সচেতন করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস আরও বেশি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ নিয়ে এমন অবস্থায় আবারও জনমনে আতঙ্ক ফিরে এসেছে। যদিও সংক্রমণের হার এখনও জাতীয় পর্যায়ে উদ্বেগজনক নয়, তবে স্থানীয় পর্যায়ে বেড়ে চলা এই প্রবণতা স্বাস্থ্যসেবায় নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে এখনই সকলকে সচেতন হতে হবে, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এই প্রেক্ষাপটে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, করোনার নতুন ধরন যদি আবারও সক্রিয় হয়, তবে আগের মতোই বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে হাসপাতাল ব্যবস্থা। তাই এখনই প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি, টিকাদান কাঠামো পুনরায় সক্রিয় করা এবং স্বাস্থ্যসেবার ওপর নজরদারি আরও জোরদার করা।
চট্টগ্রামে কোভিড পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সেই আশঙ্কায় স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন আগেভাগেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।