প্রকাশ: ৩০শে জুন’ ২০২৫ । নিজস্ব প্রতিবেদক
একটি বাংলাদেশ অনলাইন
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত কূটনৈতিক অঙ্গনে ফের আলোচনার সম্ভাবনা দেখা দিলেও, তা বাস্তবে পরিণত করতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমেই ইরানের বিরুদ্ধে নতুন কোনো হামলা চালাবে না—এই নিশ্চয়তা দিতে হবে বলে কড়া সুরে জানিয়েছেন ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত রাভানছি। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, যুদ্ধ এবং সংলাপ একসঙ্গে চলতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই কূটনীতির পথে ফিরে আসতে চায়, তবে তাদেরকে আগেই প্রমাণ করতে হবে—তারা সহিংসতা থেকে সরে এসেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক বিস্তৃত সাক্ষাৎকারে এই কূটনীতিক আরও জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আলোচনায় ফিরে আসার আগ্রহ জানানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটন শান্তিপূর্ণ আলোচনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি—স্পষ্ট করেনি। এই অনির্ধারিত অবস্থানই আলোচনার পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়, যখন গত ১৩ জুন ইসরায়েল হঠাৎ ইরানের অভ্যন্তরে একাধিক সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় আক্রমণ চালায়। এই ঘটনার পর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, ইসরায়েল-ইরানের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সামরিক জড়িত হওয়া—যেখানে মার্কিন বোমারু বিমান ইরানের অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালায়।
এই প্রেক্ষাপটেই, মধ্যস্থতাকারী ওমানের রাজধানী মাস্কাটে নির্ধারিত ষষ্ঠ দফার আলোচনার আয়োজন স্থগিত হয়ে যায়। ইরান দাবি করছে, এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তারা মোটেই আস্থা রাখতে পারছে না, যতক্ষণ না তাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আগ্রাসী পদক্ষেপ না নেওয়ার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি আসে।
সাক্ষাৎকারে মাজিদ তাখত রাভানছি আরও বলেন, “আমরা কখনোই বলিনি যে, আমরা আলোচনার বিরুদ্ধে। বরং আমরা চাই শান্তিপূর্ণ সমাধান। কিন্তু শান্তির নামে যদি কোনো পক্ষ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে, তাহলে আমরা বাধ্য হব নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে।”
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের নানা অভিযোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ গবেষণা এবং শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছি। এটা আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির মধ্যেই পড়ে। গোপনে বোমা তৈরি বা সশস্ত্র প্রোগ্রামে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই।”
তিনি অভিযোগ করেন, আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলো ইরানকে প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম ও গবেষণা সহযোগিতা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলেই দেশটি নিজস্ব প্রযুক্তিতে স্বনির্ভর হওয়ার পথে হাঁটছে।
অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, তেহরান নাকি এখন পরমাণু বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। এমনকি দেশটির প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার প্রকাশ্যে বলেছেন, প্রয়োজনে তারা একতরফাভাবে সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ধ্বংস করতে প্রস্তুত।
ইসরায়েল ইতোমধ্যেই ইরানের একাধিক সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পাশাপাশি, কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তি বিশারদকে হত্যা করেছে। এসব হামলার বেশ কয়েকটির দায় স্বীকার না করলেও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা একে ‘ছায়া যুদ্ধের স্পষ্ট রূপ’ বলে অভিহিত করেছেন।
এই উত্তপ্ত পরিবেশে, শান্তিপূর্ণ আলোচনার সম্ভাবনা কতটা বাস্তবসম্মত, সেটি নিয়ে এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ইরানের শীর্ষ কূটনীতিকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সদিচ্ছা ছাড়া কোনো আলোচনাই ফলপ্রসূ হবে না।
তাদের ভাষ্য, মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে আগ্রাসী নীতি পরিহার করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। নয়তো আরেকটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের মুখে পড়বে পুরো অঞ্চল, যার মাশুল গুনতে হবে বিশ্ব সম্প্রদায়কেই।