সর্বশেষ :
ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন আবুধাবিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর কপাল খুললো: লটারি জিতলেন ৭৫ কোটি টাকা কোচ কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় বাফুফের কমিটি থেকে বাদ শাহীন ‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের

পরমাণু ছায়ায় জর্জরিত মধ্যপ্রাচ্য: ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের নতুন বাঁক ও ‘মিডনাইট হ্যামার’ অভিযানের অনিশ্চিত উত্তরকাল

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫
  • ২৬ বার

প্রকাশ: ২২শে জুন ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন

তেহরানের আকাশপথে মধ্যরাত পেরোতেই দূর থেকে ভেসে আসে ছয়টি বিস্ফোরণের প্রতিধ্বনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ ঘোষণা করলেন—যুক্তরাষ্ট্রের বোমারু ও ক্রুজ-মিসাইল একযোগে ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের পরমাণু স্থাপনায় ‘অত্যন্ত সফল’ আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিডনাইট হ্যামার’ কোডনামে পরিচালিত এই অপারেশনে ১২৫-এর বেশি যুদ্ধবিমান অংশ নেয়; সাতটি বি-২ ‘স্পিরিট’ স্টেলথ বোমারু থেকে ফেলে দেওয়া হয় ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের জিবিইউ-৫৭ ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’, আর পারস্য উপসাগরের গভীর থেকে ছোড়া হয় টমাহক ক্রুজ-মিসাইলের ঝাঁক।

স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, পাহাড়ের পেটে আধা কিলোমিটার গভীর ফোরদো স্থাপনার প্রবেশমুখ ধসে পড়েছে; নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে বিস্তীর্ণ সারফেস অবকাঠামো পুড়ে কালো ছাই। তবু আতঙ্কিত পারমাণবিক ধোঁয়া ওঠেনি—আইএইএ মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি জানান, আঘাতের পর প্রথম কয়েক ঘণ্টায় আশপাশের অঞ্চলে তেজস্ক্রিয়তার কোনো অস্বাভাবিক মাত্রা ধরা পড়েনি।

ওয়াশিংটনের ব্যাখ্যায়, ইরানের ‘অবৈধ’ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রকল্প ধ্বংসই ছিল অভিযান-এর একমাত্র লক্ষ্য। তবে রুশ পারমাণবিক কর্পোরেশনের প্রধান গত সপ্তাহেই সতর্ক করেছিলেন, তাঁদের বিজ্ঞানীরা ইরানের কিছু স্থাপনায় কাজ করছেন; আঘাত এলে ‘চেরনোবিল ধরনের বিপর্যয়’ হতে পারে। মস্কো এখন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের দাবি তুলেছে; তেহরান বলছে—এটি ‘সৈরাচারীর নগ্ন আগ্রাসন’ এবং তারা ‘কায়দা মেনে জবাব দেবে’।

হামলার মুহূর্তেই আরেকটি কূটনৈতিক ইশারা তীক্ষ্ণ করে তোলে দৃশ্যপট: পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে রাষ্ট্রপতির মর্যাদায় আপ্যায়ন করেছেন, যেখানে আলোচনা হয়েছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে। বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর এ দেশটির সঙ্গে নতুন জোটভিত্তি গড়ে তোলার ফলে তেহরানের কূটনৈতিক সমীকরণ আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

তেহরান অবশ্য ‘অপ্রস্তুত’ ছিল না বলেই দাবি করছে। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ও মূল্যবান সেন্ট্রিফিউজ আগে থেকেই অজ্ঞাত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, ফলে প্রকৃত কৌশলগত ক্ষতি সীমিত। পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিষয়টি পুরোপুরি নাকচ না করলেও, তাঁরা বলেন—ফোরদোতে প্রবেশমুখ গুঁড়িয়ে গেলে অভ্যন্তরের জটিল সরঞ্জাম পুনরায় স্থাপন করা বহু মাসের ব্যাপার।

হামলার পরপরই ট্রাম্প টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ‘শান্তির সম্ভাবনা’র কথা তুলেছেন, আর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দৃঢ় নেতৃত্ব’কে স্বাগত জানিয়ে ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও “এখন সংলাপের দ্বার উন্মুক্ত” বলেছেন। কিন্তু ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনেই মঙ্গলবার ভোরে মাশহাদের ইমাম রেজা মাজারে মাথা রেখে অঝোরে কাঁদার একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়; অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, এটি তেহরানের জনমত-ব্যবস্থাপনার কৌশল—বড় জবাবের পূর্বাভাসও হতে পারে।

ইতিমধ্যে ইরানি পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালী বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে, যদিও প্রণালীর চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ নেয়া এখনও প্রতিরক্ষাবাহিনীর হাতে অর্পিত হয়নি। এমনটি ঘটলে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ এক ধাক্কায় ২০ শতাংশ কমে যেতে পারে, আন্তর্জাতিক তেল বাজার ইতোমধ্যে ব্যারেল-পিছু ১৫ ডলার লাফ দিয়েছে।

ইরানের বাস্তব বিকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে—মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিগুলো ও ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন আক্রমণ; হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতি শক্তিকে সক্রিয় করা; অথবা ধীরে-সুস্থে সাইবারযুদ্ধ ও প্রক্সি গোষ্ঠী ব্যবহারের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল। কিন্তু পূর্ণমাত্রায় জবাব দিলে ওয়াশিংটনের ‘দ্বিতীয় দফা’ হামলার হুমকি বাস্তবে নেমে আসবে—শুরু হতে পারে একতরফা নয়, বহুপাক্ষিক সংঘাত।

মঞ্চের পেছনে রাশিয়া-চীনের ভূমিকাও অনিশ্চিত। মস্কো প্রকাশ্যে ‘চেরনোবিল-ঝুঁকি’ দেখালেও এখনো শুধু কূটনৈতিক প্রতিবাদের পর্যায়েই আছে; বেইজিং-এর রয়্যাল ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ঝাং হাও মন্তব্য করেছেন, “চীন তেলের দাম বাড়ুক তা চায় না, আবার মার্কিন একতরফা হস্তক্ষেপকেও উসকানি মনে করে”—দুয়ের মাঝামাঝি রাস্তা খুঁজছে তারা।

এদিকে পোপ লিও চৌদ্দ: সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে ‘যুদ্ধের ট্র্যাজেডি থামানোর’ আহ্বান জানিয়েছেন; যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও যুদ্ধবিরোধী মিছিল বাড়ছে। এমন জটিল মানবিক ও রাজনৈতিক বিস্তারেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয় তোলা হচ্ছে, তবে সামরিক কৌশলবিদরা মনে করেন—ইরান অন্তত প্রথম ধাপে ‘সুনির্দিষ্ট সীমিত প্রতিশোধে’ আটকে থাকবে যাতে জনমত নিজের পক্ষে রাখা যায় এবং রাশিয়া-চীনের সমর্থন হারিয়ে না ফেলে।

তেহরান ঠিক কোন পথ বেছে নেবে, সেটিই এখন কোটি ডলারের প্রশ্ন। কারণ সহস্রাব্দের এই লড়াইয়ে কেউই ‘মুখরক্ষা’ ছাড়া যুদ্ধের অর্থনীতি, জনমত কিংবা আঞ্চলিক ভারসাম্য বিসর্জন দিতে প্রস্তুত নয়। মধ্যরাতের সেই গর্জনের পর পৃথিবী এখন গা ছমছমে নীরবতায় তাকিয়ে আছে—আর কয়েক ঘণ্টা-দুয়েক দিনের ভেতরেই নির্ধারিত হবে আগামী যুগের ছক, কিংবা খুলে যাবে আরও অচেনা যুদ্ধদ্বার।

বিশ্ব যদি সত্যিই শান্তি খোঁজে, তবে বাঙ্কার-বাস্টারের শব্দ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দরকার শোনা—রাজনীতির টেবিলের নীরব আলাপ; কারণ ইতিহাস বলে, পরমাণুর ছাই থেকে কখনওই স্থায়ী সমাধান জন্মায় না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া