প্রকাশ: ২৬ জুন, ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক আজ বৃহস্পতিবার পরিণত হয় এক ভয়াবহ দিন হিসেবে, যেখানে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এক বাবা ও তার মেয়ে, এবং আরেকজন একজন বয়স্ক পথচারী।
প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার পুরাতন মুকসুদপুর এলাকায়। সেখানে এক বালুবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যান ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার কদমী গ্রামের রহিমা বেগম (৩০)। তার পিতা সৈয়দ জামাল উদ্দিন (৭০) একই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এক মর্মান্তিক মুহূর্তে একই পরিবারের দুইজনের প্রাণ ঝরে যায় মাত্র এক দুর্ঘটনায়।
এর কিছু সময় পর, কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া এলাকায় ঘটে আরেকটি দুর্ঘটনা। এবার একজন পথচারী বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা দ্রুত তাকে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ব্যক্তি হলেন নড়াইল জেলার লোহাগাড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা জহিরুল শেখ (৬০)।
দিনের তৃতীয় দুর্ঘটনাটি সংঘটিত হয় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রাম এলাকায়। সেখানে টেকেরহাট থেকে খুলনাগামী একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে ঢাকাগামী রাজীব পরিবহনের একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এই দুর্ঘটনায় অন্তত ১০ জন যাত্রী আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও আশেপাশের বিভিন্ন ক্লিনিকে পাঠানো হয়।
মুকসুদপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শীতল চন্দ্র পাল নিশ্চিত করেছেন প্রতিটি দুর্ঘটনার সত্যতা। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছায় এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনগুলো জব্দ করা হয়েছে এবং চালকদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
গোপালগঞ্জের এই মর্মান্তিক দিনের ঘটনায় শোক ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। নিয়মিত যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, চালকদের সতর্কতা এবং মহাসড়কের পর্যাপ্ত তদারকির অভাবের কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা বলছেন, এই মহাসড়কে দ্রুত গতির যানবাহনের চাপ বাড়লেও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। তারা দ্রুত মহাসড়কে নজরদারি বৃদ্ধি, স্পিড ব্রেকার স্থাপন এবং চালকদের জন্য প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই করুণ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হচ্ছে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, সে লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। প্রতিটি প্রাণের মূল্য রয়েছে—তা যেন সড়কে অবহেলায় ঝরে না পড়ে, সেটিই এখন সময়ের দাবি।