প্রকাশ: ২৭শে জুন’ ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে ফুটবলের এক জমজমাট থ্রিলারে ইতালিয়ান জায়ান্ট জুভেন্টাসকে ৫-২ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের জানান দিয়েছে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি। জি-গ্রুপের এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অসাধারণ দলীয় সমন্বয়, দুরন্ত আক্রমণ এবং প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে গ্রুপ পর্বে শতভাগ জয়ের কীর্তি গড়েছে পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা।
উভয় দল আগেই শেষ ষোলো নিশ্চিত করলেও এই ম্যাচটি ছিল গ্রুপ সেরা হওয়ার মিশন। সেই লড়াইয়ে সিটির আধিপত্য যে কতটা প্রকট ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া গেল ৭ গোলের গোলবন্যায়। জুভেন্টাসের রক্ষণে একের পর এক আক্রমণ ঢেউ তুলেছে সিটিজেনরা, যার জবাব দিতে পারেনি টুরিনের ক্লাবটি। ম্যানসিটি গ্রুপে তিন ম্যাচে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে পরবর্তী পর্বে উঠল, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ এখনো নির্ধারিত হয়নি। অন্যদিকে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় হয়ে শেষ ষোলোতে গ্রুপ এইচ-এর চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে জুভেন্টাস।
লিসবনের স্টেডিও দা লুজে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে শুরু থেকেই আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে ম্যানসিটি। ম্যাচের ৯ মিনিটেই রায়ান আইত-নোরির নিখুঁত পাসে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন বেলজিয়ান তরুণ তারকা জেরেমি ডোকু। তবে লিড ধরে রাখতে পারেনি ইংলিশ ক্লাবটি। মাত্র দুই মিনিট পর গোলরক্ষক এডারসনের বড় এক ভুলে সমতায় ফেরে জুভেন্টাস। তার বাজে ক্লিয়ারেন্স থেকে বল পেয়ে দক্ষতার সঙ্গে গোল করেন টিউন কুপমেইনার্স।
কিন্তু আবারও ম্যাচের গতিপথ নিজেদের দিকে নিয়ে আসে সিটি। ২৬তম মিনিটে ডান দিক থেকে ম্যাথিউস নুনেসের নিচু ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে চাপহীন অবস্থায় আত্মঘাতী গোল করে বসেন জুভেন্টাস ডিফেন্ডার পিয়েরে কালুলু। ২-১ গোলে এগিয়ে যায় ম্যানসিটি এবং এরপর থেকে যেন আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে আরও ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দেয় গার্দিওলার দল। ৫২তম মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে নুনেসের আরেক দুর্দান্ত পাস থেকে কাছ থেকে বল জালে ঠেলেন আরলিং হালান্ড। এটি ছিল হালান্ডের ক্যারিয়ারের ৩০০তম গোল (ক্লাব ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে), যা তিনি করেছেন লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কিংবা কিলিয়ান এমবাপের চেয়েও কম ম্যাচ খেলে। তার গোল করার ধারাবাহিকতা ও দক্ষতা তাকে আধুনিক ফুটবলের অন্যতম ভয়ঙ্কর স্ট্রাইকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
৬৯তম মিনিটে হালান্ডের নিচু ক্রস থেকে বল পেয়ে সাভিনহোর পাসে ফিল ফোডেন সহজেই বল জালে পাঠান, স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৪-১। এরপর নিজেও একবার আলো ছড়ান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড সাভিনহো। ৭৫ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে তার জোরালো শট ক্রসবারে লেগে জালে জড়ালে আরও একবার হতাশায় ডুবে যায় জুভেন্টাস। শেষদিকে দুশান ভ্লাহোভিচ একটি গোল শোধ করলেও তা ছিল নিছকই সান্ত্বনার।
ম্যানচেস্টার সিটির এই দাপুটে জয় শুধু গ্রুপ শীর্ষতা নয়, শিরোপার অন্যতম দাবিদার হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করার ঘোষণা বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। অন্যদিকে, জুভেন্টাসের জন্য এটি একটি অ্যালার্মিং মুহূর্ত—বিশ্ব ফুটবলের মঞ্চে তারা যে এখনো বড় ম্যাচে ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ, তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। এখন দেখার বিষয়, শেষ ষোলোতে রিয়াল মাদ্রিদের মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না।
ম্যানসিটির এই জয় তাদের আক্রমণভাগের ধার এবং ট্যাকটিক্যাল গভীরতারই প্রতিফলন—যেখানে প্রতিপক্ষ যতই বড় হোক না কেন, তারা নিজেদের খেলায় অবিচল। আর ফুটবল বিশ্ব এখন তাকিয়ে, কতদূর যেতে পারে গার্দিওলার এই দুরন্ত সেনাদল।