প্রকাশ: ০৬ জুলাই’ ২০২৫ । নিজস্ব প্রতিবেদক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
এশিয়ান ফুটবলের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা করেছে বাংলাদেশের নারী দল। প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে তারা। এই অর্জন শুধু বাংলাদেশের নারীদের ফুটবলের ইতিহাসেই নয়, বরং গোটা দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য একটি যুগান্তকারী সাফল্য। এশিয়ান কাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ ছাড়াও আরও ১১টি দেশের নাম চূড়ান্ত হয়েছে, যা প্রতিযোগিতার আকার ও মাত্রাকে করে তুলেছে আরও কঠিন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও আকর্ষণীয়।
বাংলাদেশ নারী দল বাছাইপর্বে গ্রুপ ‘সি’-তে বাহরাইন, তুর্কেমেনিস্তান এবং শক্তিশালী মিয়ানমারের বিপক্ষে অনবদ্য পারফরম্যান্স দেখিয়ে মূলপর্বে জায়গা করে নেয়। তিন ম্যাচে গোল করেছে ১৬টি, হজম করেছে মাত্র ১টি। মিয়ানমারকে হারানো ছিল বাছাইপর্বের সবচেয়ে আলোচিত ফল, কারণ ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে মিয়ানমার ছিল বাংলাদেশের অনেক ওপরে। রিতুপর্ণা, তহুরা, সাজেদা, মারিয়া ও তাদের সতীর্থদের দাপুটে পারফরম্যান্সই দলটিকে নিয়ে এসেছে মহাদেশীয় মঞ্চে, যেখানে লড়াই হবে এশিয়ার শ্রেষ্ঠদের সঙ্গে।
তবে চূড়ান্ত পর্বের প্রতিপক্ষরা মোটেও সহজ নয়। এখন পর্যন্ত যে ১১টি দল নিশ্চিত হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের অবস্থান র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ওপরে। বাস্তবতা হলো, এই প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত জায়গা পাওয়া দলগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশই রয়েছে যারা ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১০০ নম্বরের নিচে অবস্থান করছে। তবু আত্মবিশ্বাসে কোনো ঘাটতি নেই লাল-সবুজের মেয়েদের। কারণ তারা জানে, ইতিহাস গড়ে ওঠে সাহস, কঠোর পরিশ্রম আর আত্মত্যাগে।
প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সঙ্গে আরও যেসব দল রয়েছে তাদের মধ্যে আছে ভারত, যাদের র্যাঙ্কিং ৭০ এবং এটি হবে তাদের দশমবারের মতো এশিয়ান কাপে অংশগ্রহণ। গ্রুপ ‘বি’ থেকে শতভাগ জয়ে তারা মূলপর্বে উঠেছে। চীনা তাইপে (র্যাঙ্কিং ৪২), ভিয়েতনাম (র্যাঙ্কিং ৩৭), উত্তর কোরিয়া (র্যাঙ্কিং ৯) এবং উজবেকিস্তান (র্যাঙ্কিং ৫১) ইতোমধ্যেই নিজেদের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে চূড়ান্ত পর্বে জায়গা নিশ্চিত করেছে।
উজবেকিস্তানের উত্তরণ ছিল অত্যন্ত নাটকীয়। নেপালের সঙ্গে পয়েন্ট, গোল ব্যবধান ও গোলসংখ্যা সবকিছু সমান হয়ে যাওয়ার পর দুই দলের মুখোমুখি ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ায়। সেখানে ৪–২ ব্যবধানে জিতে জায়গা করে নেয় উজবেকিস্তান। অন্যদিকে, গ্রুপ ‘এইচ’ থেকে শক্তিশালী উত্তর কোরিয়া শতভাগ সাফল্য নিয়ে টিকিট নিশ্চিত করেছে।
এই পর্যন্ত ১১টি দলের নাম চূড়ান্ত হলেও এশিয়ান কাপের মূলপর্বের জন্য আরও একটি দল বাকি রয়েছে। গ্রুপ ‘এ’-র খেলা এখনো মাঠে গড়ায়নি। এই গ্রুপে রয়েছে ভুটান, সিঙ্গাপুর, ইরান, জর্দান ও লেবানন। আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া এই গ্রুপপর্ব শেষ হবে ১৯ জুলাই। তখনই জানা যাবে শেষ দলটি কারা হবে।
তবে এশিয়ান কাপ শুধু এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই নয়, এটি একইসঙ্গে বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক বাছাইয়ের প্ল্যাটফর্মও। সেমিফাইনালে উঠলেই সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার টিকিট মিলবে। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে বাদ পড়লেও, বিশেষ ‘প্লে-ইন’ ম্যাচে জিতলে মিলবে বিশ্বকাপে যাওয়ার সুযোগ। এ ছাড়া কোয়ার্টার ফাইনালে খেললেই অলিম্পিক বাছাইয়ে জায়গা নিশ্চিত।
বাংলাদেশের মেয়েরা এখন এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার মঞ্চে। যেখানে তারা শুধু প্রতিনিধিত্বই করবে না, বরং লড়বে আত্মমর্যাদা, স্বপ্ন আর আগামী দিনের নারীকেন্দ্রিক ক্রীড়া জাগরণের জন্য। তাদের এই পথচলা এখন শুধু খেলার সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়—এটি হয়ে উঠেছে গোটা জাতির সম্মানের অংশ, যা আরও একবার প্রমাণ করছে—বাংলাদেশ পারেও।