প্রকাশ: ০৭ জুলাই ‘২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে বনানী থানায় দায়ের হওয়া এক অস্ত্র মামলায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (৭ জুলাই) সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এ রিমান্ডের আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষ মামলার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলেও শুনানি শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে চলতি বছরের ১৮ জুন রাজধানীর শাহবাগ ও পল্টন মডেল থানায় দায়ের হওয়া দুটি পৃথক মামলায় আনিসুল হকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। সেই রিমান্ডে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ নতুন করে বনানী থানার মামলায় রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আনিসুল হকের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে হত্যা, অস্ত্র এবং সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ। এসব মামলার অধিকতর তদন্তের স্বার্থে তাকে একের পর এক রিমান্ডে নিচ্ছে পুলিশ।
গত ২৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের একটি হত্যা মামলায় হাজিরার জন্য আদালতে উপস্থিত হন আনিসুল হক। শুনানি শেষে এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় আদালত প্রাঙ্গণে কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তি তাকে প্রকাশ্যে কিল-ঘুষি মেরে আহত করে। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এ হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা শঙ্কা ও বিচারপ্রক্রিয়ার সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আনিসুল হকের পরিবার ও আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এসব মামলার অনেকগুলোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হচ্ছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আনিসুল হকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পক্ষে পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, বনানী থানার মামলায় আনিসুল হকের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ দাবি করছে, তার বাসা ও অফিস থেকে কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, যা তিনি নিজের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করতেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে আনিসুল হকের পক্ষে কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি বলে জানানো হয়।
রিমান্ড শুনানির দিন আদালত প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আদালতের বাইরে আনিসুল হকের সমর্থকদের একাংশ তাকে দেখতে ভিড় করেন। নিরাপত্তার কারণে পুলিশ তাদের দূরে সরিয়ে দেয়।
এদিকে আনিসুল হকের গ্রেপ্তার ও ধারাবাহিক রিমান্ডের ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। একাংশ বলছে, সাবেক একজন আইনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এ ধরনের পদক্ষেপ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তুলতে পারে।
আনিসুল হকের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা শিগগিরই উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করবেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমাণ করতে আইনগত লড়াই চালিয়ে যাবেন।
বাংলাদেশের একজন সাবেক মন্ত্রী হিসেবে আনিসুল হকের এভাবে গ্রেপ্তার ও আদালত প্রাঙ্গণে হামলার ঘটনায় দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচারপ্রক্রিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরপেক্ষ বিচার দাবিতে নানা মহল থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে যাতে আইনসঙ্গত প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে এবং কেউ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার না হয়।
পরবর্তী শুনানির তারিখ ও মামলার অগ্রগতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালত ও তদন্ত সংস্থা থেকে শিগগিরই বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে বলে জানা গেছে।