ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে ভয়াবহ এক বিমান দুর্ঘটনায় চরম উদ্বেগ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটে উড্ডয়ন করা এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই১৭১, যেটি আহমেদাবাদ থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের গেটউইক অভিমুখে যাত্রা করছিল, উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই স্থানীয় একটি লোকালয়ে বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজটিতে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন।

এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছায় দমকল বাহিনী ও উদ্ধারকারী দল। বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসস্তূপ থেকে আহতদের উদ্ধার করে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, যদিও এখনো সঠিক হতাহতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র প্রকাশ করা হয়নি। ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকা থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠে আসতে দেখা যায়, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

এয়ার ইন্ডিয়ার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ফ্লাইটটি নিয়মিতভাবে আহমেদাবাদ-গেটউইক রুটে চলাচল করত এবং উড্ডয়নের সময় আবহাওয়া স্বাভাবিক ছিল। তবে ঠিক কী কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হলো, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যায়নি। প্রাথমিকভাবে যান্ত্রিক ত্রুটি অথবা পাইলটের কারিগরি সমস্যার সম্ভাবনা থাকলেও তদন্তের আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরপরই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সরব হয়ে ওঠে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক শোকবার্তায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং গুজরাট সরকারকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। তিনি জানান, উদ্ধার তৎপরতা যাতে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে পরিচালিত হয়, সে বিষয়ে কেন্দ্র সরকার সর্বোচ্চ মনোযোগ দিচ্ছে।

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন এবং জানান, উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা ও সহায়তা নিশ্চিত করতে রাজ্য প্রশাসন সর্বোচ্চ তৎপরতা চালাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

দুর্ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী রামমোহন নাইডু ইতিমধ্যে গুজরাটের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন এবং উদ্ধার ও তদন্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে ভারতের বাইরেও এই দুর্ঘটনার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং দুর্ঘটনার শিকার যাত্রী ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি দ্রুত উদ্ধার ও তদন্ত কার্যক্রম চালানোর আহ্বান জানান।

এই দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই হতাহতের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এবং সরকারের প্রতি দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের শনাক্ত করার দাবি জানাচ্ছেন। বিমানটির ফ্লাইট রেকর্ডার (ব্ল্যাক বক্স) উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, যা এই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন উঠছে, আর এই দুর্ঘটনা সে আলোচনাকে আরও গভীর করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ মুহূর্তে উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এ ধরনের দুর্ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সে বিষয়েও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির নাগরিকরা।