প্রকাশ: ১৮ জুন, ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শক্তি প্রদর্শনের চিত্র আবারও স্পষ্ট হলো। সম্প্রতি ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি একটি বিবৃতির মাধ্যমে দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের আকাশপথ পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এবং দেশটির বাসিন্দারা ইরানি হামলার বিরুদ্ধে কার্যত অসহায় অবস্থায় রয়েছে।
এই বিবৃতি দেওয়া হয় ইসরায়েলের ওপর পরিচালিত সর্বশেষ এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর। বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘ফাত্তাহ’ নামের একটি শক্তিশালী এবং উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের ব্যয়বহুল এবং উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। এই সফল হামলা ইরানের সামরিক সক্ষমতার একটি উজ্জ্বল বার্তা বহন করে বলেও দাবি করা হয়।
ইরানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই হামলা প্রমাণ করেছে যে দখলদার অঞ্চল ইসরায়েলের আকাশসীমা ইরানের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আর এই আকাশপথের অধীনে বসবাসকারী ইসরায়েলিরা এখন ইরানি হামলার সম্ভাব্য জবাব দেওয়ার মতো অবস্থানে নেই।
তবে এই হামলার বিস্তারিত তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি ইরান। অন্যদিকে, ইসরায়েলি মিডিয়াগুলোর তথ্য অনুযায়ী, হামলার পরপরই তেল আবিবের আকাশে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে এবং একটি পার্কিং এলাকায় আগুন লেগেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ইসরায়েল সরকার বা সামরিক বাহিনী হামলার প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি এবং লক্ষ্যবস্তু নিয়ে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করেনি। এ বিষয়ে কৌশলগত কারণে তথ্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখা হয়েছে।
এই ঘটনার মধ্যে আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইরানকে উদ্দেশ্য করে সম্প্রতি একটি কড়া বার্তা দিয়েছেন। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক পোস্টে তিনি দাবি করেন, ইরানের আকাশপথ তিনি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন এবং দেশটিকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ করার হুঁশিয়ারিও দেন। তিনি আরও বলেন, খামেনেই কোথায় লুকিয়ে রয়েছেন তা আমেরিকা জানে এবং তিনি একটি সহজ লক্ষ্যবস্তু হলেও এখনই তাকে হত্যা করার কথা ভাবছে না যুক্তরাষ্ট্র।
এই দুই পক্ষের বক্তব্য ও শক্তি প্রদর্শনের এই পালা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলছে। বিশেষ করে ইসরায়েল ও ইরান উভয়পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় এবং যেকোনো সময় সংঘাত আরও বড় রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ইরানের ওপর সামরিক চাপ বাড়ালেও কূটনৈতিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলছে, যাতে এই অঞ্চলে সম্ভাব্য একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এড়ানো যায়।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে, বিশ্বের দৃষ্টি এখন ইরান-ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। যত দিন যাচ্ছে, এই উত্তেজনা শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক নিরাপত্তাকেও প্রভাবিত করছে।