প্রকাশ: ২৫ জুন, ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
ইসরাইল ও ইরানের মধ্যকার সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেস প্রতিনিধি বাডি কার্টার নরওয়ের নোবেল কমিটির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ মনোনয়নের সুপারিশ করেন। তার মতে, মধ্যপ্রাচ্যে সশস্ত্র সংঘাত থামিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ট্রাম্পের যে প্রচেষ্টা, তা বিশ্ব শান্তির জন্য এক ঐতিহাসিক ও ব্যতিক্রমী উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।
চিঠিতে কার্টার উল্লেখ করেন, যেসব ক্ষেত্রে অনেকেই কূটনৈতিকভাবে সফল হওয়ার সম্ভাবনা দেখেননি, সেসব ক্ষেত্রেও ট্রাম্পের নেতৃত্ব ও দৃঢ় অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইসরাইল-ইরান উত্তেজনার মধ্যে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ এবং যুদ্ধবিরতির ঘোষণা অনেককে অবাক করলেও, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ ও ইতিবাচকভাবে দেখা হয়েছে। ২৩ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন, যদিও উভয় পক্ষ—ইসরাইল ও ইরান—পরবর্তীতে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।
কার্টার আরও দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুধু যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেননি, বরং ইরানের পরমাণু কর্মসূচি থামাতে সাহসী পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, “বিশ্বের অন্যতম বড় সন্ত্রাসবাদ পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্র ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে ট্রাম্পের নেতৃত্ব কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।”
উল্লেখ্য, এর আগেও মধ্যপ্রাচ্যের আব্রাহাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ট্রাম্পের নাম নোবেল শান্তি পুরস্কারের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় আলোচনায় এসেছিল। এবার ইরান-ইসরাইল সংকটে তাঁর সরাসরি নেতৃত্ব ও কূটনৈতিক তৎপরতা তাকে আবারো সেই আলোচনায় ফিরিয়ে এনেছে।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির পটভূমিতে উভয় দেশের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ২৪ জুন ইসরাইলের চালানো এক হামলায় ইরানের এলিট ফোর্স আইআরসিজির দুই জেনারেলসহ সাত সদস্য নিহত হন বলে দাবি করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এখন পর্যন্ত দেশটির হামলায় ইরানে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬১০ জন এবং ধ্বংস হয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনা।
ইরানও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। দেশটি দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করা হয়েছে, যার প্রতিক্রিয়ায় কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইরানি হামলায় অন্তত ২৪ জন ইসরাইলি নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
এই পটভূমিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি প্রচেষ্টার অন্যতম নজির হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও বাস্তবতার মাটিতে এই যুদ্ধবিরতি কতটা কার্যকর হবে তা সময়ই বলে দেবে, তবুও ট্রাম্পের এই ভূমিকাই তাকে পুনরায় নোবেল শান্তি পুরস্কারের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, বৈশ্বিক সংকটে একজন প্রভাবশালী কূটনীতিকের নেতৃত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।