সর্বশেষ :
ভারত না এলে বড় আর্থিক সংকটে পড়বে বিসিবি ভোট বিক্রি করলেই পাঁচ বছর নির্যাতনের শিকার হবেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রকাশ পাবে বিএনপির জনপ্রিয়তা: রিজভী চট্টগ্রামে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত তিন আবুধাবিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর কপাল খুললো: লটারি জিতলেন ৭৫ কোটি টাকা কোচ কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় বাফুফের কমিটি থেকে বাদ শাহীন ‘আমাদের কী পাপ’: ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো গাজাবাসী শিশুর হৃদয়বিদারক আহ্বান ভাঙনের গল্পে আত্মজয়: তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি মিথিলা মসজিদের মাইকে ঘোষণা, প্রকাশ্যে পিটিয়ে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা: ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও মামলা হয়নি আফগান সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ: ‘ভারত-সমর্থিত’ ৩০ সন্ত্রাসী নিহতের দাবি পাকিস্তানের

তেলআবিবের ‘এক-তৃতীয়াংশ ধ্বংস’—সাবেক মার্কিন কর্নেলের দাবির নেপথ্য সত্য খুঁজতে

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫
  • ২ বার

প্রকাশ: ২২শে জুন ২০২৫ │ একটি বাংলাদেশ ডেস্ক │ একটি বাংলাদেশ অনলাইন

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান–ইসরায়েল যুদ্ধের উত্তাপ যখন বিশ্বমঞ্চে নিতান্তই দগদগে, ঠিক সেই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) মার্কিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ডগলাস ম্যাকগ্রেগর এমন একটি মন্তব্য ছুড়ে দেন, যা মুহূর্তের মধ্যে অজস্র শেয়ার, সংবাদ শিরোনাম ও তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। স্বনামধন্য এই যুদ্ধবিদ ও উপসাগর–ইরাক সংঘাতের বীরযোদ্ধা লেখেন, ‘ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে তেলআবিবের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে; হামলা এড়াতে অসংখ্য ইসরায়েলি বিমান সাইপ্রাসে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

সোশ্যাল মিডিয়ার হাওয়ায় দাবিটি পৌঁছায় লাখো ব্যবহারকারীর টাইমলাইনে। মধ্যপ্রাচ্য পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ একে ‘যুদ্ধের ধোঁয়ার ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা’ হিসেবে বর্ণনা করলেও, ইসরায়েল ও পশ্চিমা প্রধানধারার সংবাদমাধ্যমে এর সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মতো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

১৯৯১ সালের উপসাগর যুদ্ধে ‘৭৩ ইস্টিং’ নামের ঐতিহাসিক ট্যাঙ্কযুদ্ধের পরিকল্পনাকারী হিসেবে খ্যাতি পান ডগলাস অ্যাবট ম্যাকগ্রেগর। যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীতে সাড়ে তিন দশকের ক্যারিয়ারে তিনি ন্যাটোর কসোভো অভিযান, ইরাক অভিযানের কৌশলগত নকশাও তৈরি করেন। অবসরের পর থেকে তিনি প্রকাশ্য বক্তৃতা, টকশো ও সামাজিক মাধ্যমে স্পষ্টভাষী সমালোচক হিসেবে পরিচিত; ২০২০-এ ট্রাম্প প্রশাসনের জার্মানি-র দূতাবাসে তাকে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব আলোচিত হয়েছিল। সোজাসাপ্টা ভাষায় তাঁর মন্তব্য অতীতে যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছে, তেমনি কখনো অপ্রীতিকর ভুল তথ্যের দায়ও টেনেছে।

ম্যাকগ্রেগর দাবি করেছেন, ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতেই তেলআবিব নগরীর এক-তৃতীয়াংশ ভেঙেচুরে গেছে। অথচ ইসরায়েলি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনের জরুরি বিবৃতিতে ‘গুরুতর কিন্তু কেন্দ্রীভূত’ ক্ষয়ক্ষতির কথা বলা হলেও, নগরীর মোট জনবসতির এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ধ্বংস হওয়ার তথ্য তারা অস্বীকার করেছে। ইসরায়েল-ভিত্তিক টাইমস অব ইসরায়েল শনিবার মধ্যরাতের আপডেটে জানিয়েছে, ১৫ ও ১৮ জুনের দু’দফা ইরানি ব্যালিস্টিক হামলায় ৮৬ জন আহত এবং মধ্যাঞ্চলীয় তেলআবিব, নেস সিওনা ও বাট ইয়াম জেলায় কয়েকটি আবাসিক ভবন, রাস্তা ও বৈদ্যুতিক পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ‍ঢালাও ধ্বংসযজ্ঞের বদলে “গুরুতর স্থাপনা-ক্ষতি” ও “বিচ্ছিন্ন অগ্নিকা­ণ্ড”-এর ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায়—রিশন লেতসিয়ন, হাইফা ও বেয়ার শেভার কিছু ভবন আংশিক পুড়ে ছাই হলেও কেন্দ্রীয় ব্যবসা জেলাগুলো তুলনামূলক অক্ষত । যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান সরাসরি উল্লেখ করেছে, “ইরানি হামলায় বৃহৎ আকারের ধ্বংসাত্মক দৃশ্য থাকলেও নগরী কার্যত অচল হয়ে যায়নি” ।

ম্যাকগ্রেগর পোস্টে যে ‘অনেক ইসরায়েলি বিমান সাইপ্রাসে সরিয়ে ফেলা’-র কথা বলেছেন, সেটি পরীক্ষার দাবী রাখে। রয়টার্সএপি জোটবদ্ধ প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয়েছে, ইরানের পাল্টা হামলার পর ইসরায়েলি বেসামরিক যাত্রীবাহী বিমানের (এল-আল, আর্কিয়া ইত্যাদি) কমপক্ষে ৩০-৩২টি ফ্লাইট সাইপ্রাসে অবতরণ করেছে অথবা সিডিউল পরিবর্তন করে সেখান থেকে রুট পুনর্বিন্যাস করেছে । তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ তাদের যুদ্ধবিমান বা এয়ার ফোর্সের মূল প্ল্যাটফর্ম স্থানান্তরের কোন ঘোষণা দেয়নি, বরং বরাবরের মত নীরবতা বজায় রেখেছে। সাইপ্রাস প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও ব্রিটিশ অভিনিয়ান ঘাঁটি আরএএফ আকরোতিরি-র মুখপাত্রেরাও ‘ইসরায়েলি সামরিক জেট আসার’ বিষয়টি নিশ্চিত করেনি । ফলে গড়ে ওঠা জনমত এরই মধ্যে ‘অপপ্রচার না বাস্তবতা’ প্রশ্নে ভাগ হয়ে গেছে।

গত ১৩ জুন ইসরায়েল যখন ইরানের ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান পারমাণবিক কমপ্লেক্সে হামলা চালায়, তার ঠিক ২৪ ঘণ্টার মাথায় ইরান টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রভিত্তিক প্রতিশোধ। ইসরায়েলি হোম ফ্রন্ট কমান্ড দু’বার দেশব্যাপী শেল্টার সতর্কতা জারি করে; তেলআবিব শহরের মেট্রো সেবা কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকতে বাধ্য হয়; হাসপাতালগুলো বেসমেন্টে অপারেশন থিয়েটার স্থানান্তর করে ।

এ পর্যন্ত ইরানি হামলায় মোট ২৪ জন নিহত ও দুই শতাধিক আহত—ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে এমনটি জানা গেছে, যদিও সংখ্যাটি স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করা যায়নি । ইরান নিজেও মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলায় ৮৬৫ নিহতের হিসাব দিয়েছে—সংখ্যাগুলো দুই পক্ষের প্রচারণা-চাপানউতোরকে স্পষ্ট করে ।

ম্যাকগ্রেগরের বক্তব্য যে তীব্র আলোড়ন তুলেছে, তা সত্য; কিন্তু তথ্য-যুদ্ধে ‘ফ্যাক্ট-চেক’ আজ সবচেয়ে ভারী অস্ত্র। সামরিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বড় আকারের ক্ষেপণাস্ত্র সন্ত্রাস ঠেকাতে ইসরায়েলকে নিয়তই ‘প্রতিরোধ-কৃতি’ প্রচার চালাতে হয়, আবার ইরানও ‘বিজয়ের প্রচার’ বাড়িয়ে তুলে মনোবল ধরে রাখে। সামাজিক মাধ্যমে যারাই বেসরকারি তথ্য দেন, তাঁদের দর্শকদের প্রতি দায়িত্ব—স্বাধীন উৎসে মিলিয়ে দেখা।

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানায় সংঘাত নতুন মাত্রায় গড়িয়েছে। স্ট্রেইট অব হরমুজ বন্ধের ইরানি হুমকি ইতোমধ্যে বিশ্ব তেলবাজারকে অস্থির করে তুলেছে । নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠক ডাকলেও সমাধানের আলোর রেখা দূরেই রয়ে গেছে।

ওয়াশিংটনের অভিজ্ঞ সামরিক বিশ্লেষক কর্নেল ম্যাকগ্রেগর ইতিহাসের নানা পর্যায়ে সঠিক ঘটনাও পূর্বাভাস দিয়েছেন, কিন্তু বর্তমান দাবির ক্ষেত্রে দৃশ্যমান প্রমাণ ও ময়দানি পরিসংখ্যান এখনো তাঁর বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি সঙ্গ দেয় না। তবু ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ যে নতুন করে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও তথ্য-স্বরূপ—উভয় ক্ষেত্রেই শঙ্কার সীমা বাড়িয়ে দিল, সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই। সুতরাং, যুদ্ধের এই ধোঁয়াশায় কোনো পক্ষের বিবৃতি কিংবা ভাইরাল পোস্ট নয়, বরং নিরপেক্ষ অনুসন্ধান ও স্বচ্ছ স্যাটেলাইট-ডেটাই হতে পারে সত্যের একমাত্র নির্ভরযোগ্য মানদণ্ড।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া